বেরিয়ে আসছে আদানির বিদ্যুৎ আমদানি চুক্তির অনিয়ম!
ভারতের আদানি গ্রুপের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের করা বিদ্যুৎ আমদানি চুক্তিতে একাধিক অনিয়ম উঠে এসেছে। এসব অনিয়মের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট আদানি গ্রুপের সঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে করা সব বিদ্যুৎ চুক্তি পর্যালোচনা করার নির্দেশ দিয়েছেন। পর্যালোচনার প্রতিবেদন আগামী তিন মাসের মধ্যে দাখিল করতে বলা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
### অনিয়মের বিবরণ:
১. **অবৈধ রুটে বিদ্যুৎ আমদানি:**
চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর দিয়ে আদানি গ্রুপের বিদ্যুৎ বাংলাদেশে প্রবেশ করলেও এটি কোনো শুল্ক স্টেশন নয় বলে জানিয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর।
২. **করমুক্ত আমদানি নীতি ও বাড়তি কয়লার দাম:**
চুক্তি অনুযায়ী, আমদানিকৃত বিদ্যুতের ক্ষেত্রে শুল্ক-কর মওকুফের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে (বিপিডিবি)। তবে এ বিষয়ে যথাযথ অনুমোদন নেওয়া হয়নি। পাশাপাশি, আদানি গ্রুপ কয়লার দাম টনপ্রতি ৯৬ ডলার দাবি করলেও পায়রা ও রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য একই ধরনের কয়লা টনপ্রতি ৭৫-৮০ ডলারে পাওয়া গেছে।
৩. **বিলম্বে বিল পরিশোধের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সুদ:**
চুক্তিতে বিলম্বে বিল পরিশোধের জন্য বছরে ১৫ শতাংশ চড়া সুদের শর্ত রয়েছে, যা পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তিতে নেই।
৪. **বিল বৃদ্ধির দাবি:**
আদানি গ্রুপ বিদ্যুতের দাম ২২ শতাংশ বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে এবং বকেয়া বিল দ্রুত পরিশোধের চাপ দিচ্ছে।
### চুক্তি নিয়ে প্রশ্ন:
২০১৭ সালের নভেম্বরে আদানি পাওয়ার লিমিটেডের ঝাড়খণ্ড পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে ২৫ বছরের জন্য ১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি করে বিপিডিবি। তবে চুক্তির সময় ভারত সরকার পাওয়ার প্ল্যান্টটিকে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা দিয়ে কর ছাড় দিলেও, বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তিতে এ তথ্য গোপন রাখা হয়।
কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শামসুল আলম বলেছেন, চুক্তির শর্তগুলো জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় যথাযথভাবে যাচাই করা হয়নি। চুক্তির প্রতিটি ধারা প্রকাশ করে তা খতিয়ে দেখার দাবি জানান তিনি।
### হাইকোর্টের নির্দেশনা:
বিদ্যুৎ চুক্তির প্রতিটি ধারা পুনর্বিবেচনা করে জাতীয় স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হওয়ার বিষয়গুলো চিহ্নিত করতে বলা হয়েছে। পর্যালোচনার মাধ্যমে অনিয়মের যথাযথ তথ্য তুলে আনার নির্দেশ দেন আদালত।