তিন দেশে বাড়ি আছে দুর্নীতির ‘সম্রাট’ ফরিদপুরের নিক্সনের!
ফরিদপুরের প্রভাবশালী সাবেক সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাতিজা হওয়ার সুবিধা নিয়ে এক দশকে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে এলাকায় ভয়ভীতি সৃষ্টি করেন। ১০ বছরে তার সম্পদ বেড়েছে ৫৪ গুণ। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তিনি গা-ঢাকা দেন। দুদকের আবেদনে গত ২৩ অক্টোবর নিক্সন ও তার স্ত্রী তারিন হোসেনের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা জারি করে আদালত।
### রাজনৈতিক উত্থান ও বিতর্ক
নিক্সন তিনবারের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হিসেবে ফরিদপুর-৪ (ভাঙ্গা-সদরপুর-চরভদ্রাসন) আসন থেকে নির্বাচিত হন। তার বাড়ি মাদারীপুরের শিবচরে হলেও ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে হঠাৎ করে ফরিদপুরে রাজনীতি শুরু করেন। প্রথমে ভাঙ্গার ব্রাহ্মণপাড়ায় ৩৮ শতাংশ জমি কিনে বাড়ি তৈরি করেন। সংসদ সদস্য হওয়ার পর থেকেই ভাঙ্গা, সদরপুর ও চরভদ্রাসন উপজেলায় নিজের আধিপত্য বিস্তার করেন। জমি দখল, রাজনৈতিক বিরোধীদের দমন এবং ব্যাপক সম্পদ অর্জনের অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। ঢাকার বনানী, গুলশান, পূর্বাচলসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় জমি, বাড়ি এবং বিদেশে সম্পদ অর্জন করেন তিনি।
### সম্পদ বৃদ্ধির হিসাব
২০১৪ সালে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার সময় তার কৃষি আয়ের পরিমাণ ছিল দুই কোটি পাঁচ লাখ টাকা। কিন্তু ২০২৩ সালে জমি, বাড়ি, গাড়ি ও অন্যান্য সম্পদের হিসাব অনুযায়ী, তার সম্পদ বেড়েছে ৫৪ গুণ। তিনি ও তার স্ত্রীর নামে ঢাকার বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় ফ্ল্যাট ও প্লট, শিবচর, ভাঙ্গা এবং সাভারে জমি, এমনকি সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডায় বাড়ির মালিকানা রয়েছে।
### দুর্নীতি দমন কমিশনের অনুসন্ধান
দুদক নিক্সনের বিরুদ্ধে সম্পদ-অবৈধ আয়সহ নানা অভিযোগে তদন্ত শুরু করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক, বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান, রাজউক ও ভূমি অফিসসহ শতাধিক প্রতিষ্ঠানের নথি তলব করেছে। ইতোমধ্যে অনেক নথি দুদকের কাছে পৌঁছেছে। নিক্সনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ফরিদপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহাদাৎ হোসেনের বিরুদ্ধেও বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠেছে।
### অভিযোগ ও মামলার অবস্থা
নিক্সনের বিরুদ্ধে হামলা, নির্যাতন এবং প্রতিপক্ষকে দমন করার অভিযোগে তিনটি মামলা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, তিনি স্থানীয় রাজনীতিতে ভিন্নমত দমন করতে হামলা ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করতেন। ভাঙ্গায় একটি মাদরাসার ২৮ জন শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন বন্ধ করার মতো ঘটনাও ঘটান তিনি।
### স্থানীয় জনগণের প্রতিক্রিয়া
নিক্সনের অত্যাচারে ভাঙ্গা, সদরপুর ও চরভদ্রাসনের মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। কেউ তার আদেশ অমান্য করলে তাকে শারীরিক নির্যাতন করে টয়লেটে আটকে রাখার মতো অমানবিক শাস্তি দেওয়া হতো। স্থানীয় রাজনীতিতে নিক্সনের প্রভাব এতটাই বিস্তৃত ছিল যে, তিনি অন্য সংসদ সদস্যদের এলাকাতেও খবরদারি করতেন।
বর্তমানে নিক্সন চৌধুরী পলাতক এবং তার বিরুদ্ধে তদন্ত ও মামলা চলমান রয়েছে।